উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure): কারণ, লক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের উপায়
উচ্চ রক্তচাপ, যা হাই ব্লাড প্রেসার নামেও পরিচিত, বর্তমানে একটি অত্যন্ত সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনি রোগের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। বেশিরভাগ মানুষই উচ্চ রক্তচাপের প্রাথমিক লক্ষণগুলো বুঝতে পারেন না, তাই এটি নীরব ঘাতক (Silent Killer) হিসেবে পরিচিত। এই নিবন্ধে আমরা উচ্চ রক্তচাপের কারণ, লক্ষণ এবং এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কিছু সহজ উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
উচ্চ রক্তচাপের কারণ কী?
উচ্চ রক্তচাপের কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই, তবে কিছু বিষয় এই ঝুঁকি বাড়াতে পারে:
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত লবণ, চর্বিযুক্ত খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্য (processed food) গ্রহণ রক্তচাপ বাড়াতে পারে।
- শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা: নিয়মিত ব্যায়াম না করলে ওজন বাড়ে এবং রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে।
- অতিরিক্ত ওজন: শরীরের ওজন বেশি হলে হৃদপিণ্ডকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়, যা রক্তচাপ বাড়ায়।
- ধূমপান ও মদ্যপান: এই দুটি অভ্যাস রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং রক্তচাপ বাড়ায়।
- বংশগত কারণ: পরিবারে যদি উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস থাকে, তবে এই রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে রক্তচাপ বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়।
লক্ষণসমূহ: কখন সতর্ক হবেন?
উচ্চ রক্তচাপের কোনো সুস্পষ্ট লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হওয়া জরুরি:
- মাথাব্যথা: বিশেষ করে সকালের দিকে মাথার পেছনের দিকে তীব্র ব্যথা।
- শ্বাসকষ্ট: ছোটখাটো পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট হওয়া।
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা: সারাক্ষণ ক্লান্তি অনুভব করা এবং কাজে মন না বসা।
- দৃষ্টিতে সমস্যা: ঝাপসা দেখা বা চোখের সামনে অন্ধকার দেখা।
- বুকে ব্যথা: মাঝে মাঝে বুকে চাপ বা অস্বস্তি অনুভব করা।
- মাথা ঘোরা: হঠাৎ করে মাথা ঘোরা বা ভারসাম্যহীনতা অনুভব করা।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সহজ উপায়
আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু সহজ জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা জরুরি:
- লবণ কম খান: প্রতিদিনের খাবারে লবণের পরিমাণ সীমিত করুন। প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন চিপস, ফাস্ট ফুড এবং টিনজাত খাবার (canned food) এড়িয়ে চলুন।
- স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ: বেশি করে ফল, সবজি, ডাল এবং শস্য জাতীয় খাবার (whole grains) খান। পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, যেমন কলা, মিষ্টি আলু এবং পালং শাক রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, জগিং, সাঁতার কাটা বা সাইক্লিং-এর মতো শারীরিক কার্যকলাপ করুন।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: আপনার উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখুন।
- ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ: এই অভ্যাস দুটি সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করুন।
- মানসিক চাপ কমান: পর্যাপ্ত ঘুম, ধ্যান (meditation) এবং হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন।