ডেঙ্গু জ্বর: লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বর একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। বর্ষার সময় এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত রোগ, যা এডিস মশা দ্বারা ছড়ায়। এই নিবন্ধে আমরা ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায়, এবং এর সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহ
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার ৩-১৪ দিনের মধ্যে দেখা যায়। লক্ষণগুলো ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ নিচে দেওয়া হলো:
- তীব্র জ্বর: হঠাৎ করে ১০৪-১০৫° ফারেনহাইট পর্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রা।
- মাথাব্যথা: তীব্র মাথাব্যথা, বিশেষ করে কপালের অংশে।
- চোখের পেছনে ব্যথা: চোখ নাড়াচাড়া করলে তীব্র ব্যথা অনুভূত হওয়া।
- শরীরে ব্যথা: হাড়, পেশী এবং জয়েন্টে তীব্র ব্যথা, যা অনেক সময় "হাড় ভাঙা জ্বর" নামে পরিচিত।
- ত্বকে লাল ফুসকুড়ি: জ্বর আসার ২-৫ দিন পর ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি দেখা যেতে পারে।
- বমি বমি ভাব এবং বমি: পেটে অস্বস্তি এবং বমি হতে পারে।
- ক্লান্তি: প্রচণ্ড দুর্বলতা এবং ক্লান্তি অনুভব করা।
- ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়
ডেঙ্গু প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো মশার প্রজনন রোধ করা এবং মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: বাড়ির ভেতর এবং আশেপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করুন। টবে, পরিত্যক্ত টায়ার, এসি বা ফ্রিজের নিচে, এবং অন্য যেকোনো স্থানে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। এই স্থানগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।
- মশারির ব্যবহার: দিনের বেলায় বা রাতে ঘুমানোর সময়ও মশারি ব্যবহার করুন। এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলায় বেশি কামড়ায়।
- পোশাক: লম্বা হাতাযুক্ত শার্ট এবং লম্বা প্যান্ট পরুন, যাতে শরীরের বেশিরভাগ অংশ ঢাকা থাকে।
- মশা তাড়ানোর স্প্রে: মশা তাড়ানোর জন্য বাজারে প্রচলিত স্প্রে বা ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
- জানালায় জাল ব্যবহার: বাড়ির জানালায় জাল ব্যবহার করুন, যাতে মশা ঘরে প্রবেশ করতে না পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বরের কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, সঠিক যত্ন এবং বিশ্রাম নিলে এটি সেরে যায়। তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি:
- চিকিৎসকের পরামর্শ: জ্বর হলে দেরি না করে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডেঙ্গু নিশ্চিত হলে ডাক্তার আপনাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম: জ্বর থাকাকালীন সময়ে পুরোপুরি বিশ্রাম নিন।
- হাইড্রেশন: প্রচুর পরিমাণে পানি, ওরস্যালাইন, ফলের রস এবং অন্যান্য তরল খাবার পান করুন। শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- জ্বর কমানোর ওষুধ: শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ব্যবহার করুন। কোনো অবস্থাতেই অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেনের মতো ওষুধ ব্যবহার করবেন না, কারণ এগুলো রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ায়।
- গুরুতর লক্ষণ: যদি আপনার গুরুতর লক্ষণ দেখা যায়, যেমন পেটে তীব্র ব্যথা, বমি, নাক বা দাঁত থেকে রক্ত পড়া, বা প্রচণ্ড দুর্বলতা, তাহলে অবিলম্বে হাসপাতালে যান।